চুই ঝাল আবাদের সংক্ষিপ্ত উৎপাদন পদ্ধতি চাই?

উত্তর সমূহ

  1. সৈয়দা সিফাত জাহান, অতিরিক্ত উপপরিচালক (শস্য), লালমনিরহাট

    জমি ও মাটিঃ দো-আঁশ ও বেলে দো-আঁশ মাটি এবং পানি নিষ্কাশনের সুবিধাযুক্ত ও ছায়াময় উঁচু জমিতে সাধারণত চুই চাষ করা হয়। সাধারণ ফলবাগান বা বৃক্ষ বাগানের মাটি চুই চাষের জন্য উপযোগী। রোপণের সময়ঃ বৈশাখ জ্যৈষ্ঠ (এপ্রিল-মে) এবং আশ্বিন-কার্তিক (অক্টোবর-নভেম্বর) মাস এ দুইবার হলো চুইঝালের লতা রোপণের উপযুক্ত সময়। বংশবিস্তারঃ বীজ ও অঙ্গজ প্রজনন বা লতা কাটিং পদ্ধতিতে চুইঝালের বংশবিস্তার করা যায়। কাটিং পদ্ধতিতে এর কাণ্ড বা শাখা ৫০ থেকে ৭৫ সেমি লম্বা করে কেটে সরাসরি মাটিতে রোপণ করা হয়। স্থানীয়ভাবে কাটিং বা শাখাকে পোড় বলা হয়। একটি পোড়ে কমপক্ষে ৪/৫ টি পর্বসন্ধি থাকে। বাণ্যিজিকভাবে পলিব্যাগে চারা তৈরি করা যায়। পরে পলিব্যাগ থেকে চারা নিয়ে মূল জমিতে রোপণ করা যায়। লতা কাটিংয়ে গাছ দ্রুত বড় হয় এবং ফলন তাড়াতাড়ি পাওয়া যায়। বীজ থেকে বংশবিস্তার জটিল, সময়সাপেক্ষ বলে আমাদের দেশে শুধু লতা থেকে বংশবিস্তার করা হয়। কাটিং শোধনঃ চুইঝালের কাটিং চারা রোপণের আগে অবশ্যই শোধন করে নেওয়া ভালো। ১ লিটার পানিতে ২-৩ গ্রাম প্রোভ্যাক্স/নোইন/অটোস্টিন মিশিয়ে কাটিং ৩০ মিনিট চুবিয়ে রাখার পর পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলে কাটিং রোপণ করতে হবে। ফলে পরবর্তীতে রোগ ও পোকার আক্রমণ কম হয়।সার ও সেচ ব্যবস্থাপনাঃ চুই চাষে চাষিরা সাধারণত পোড় বা শাখা রোপণের পূর্বে গর্তে পচা আবর্জনা বা ছাই ব্যবহার করেন। তাছাড়া কৃষি বিভাগের পরামর্শ অনুযায়ী সাধারণ হারে ইউরিইয়া, টিএসপি, এমওপি বর্ষার আগে ও পরে গাছের গোড়া থেকে ১ হাত দূরে প্রয়োগ করে থাকেন। সপ্তাহে ১ বার গাছের গোড়ায় সেচ দিলে গাছের বাড়বাড়তি স্বাভাবিক থাকে। বর্ষাকালে চুইঝালের গোড়ায় যাতে পানি না জমে সে দিকে বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে। চুইঝাল গাছ লাগানোর পদ্ধতিঃ সাধারণত আম, সুপারিসহ কাঠ জাতীয় গাছের গোড়া থেকে ১২-১৫ ইঞ্চি দূরে গর্ত করে চুই গাছের কাটিং লাগাতে হয়। গর্তের মধ্যে কিছু গোবর, বর্জ্য, ৫০ গ্রাম ইউরিয়া, ৫০ গ্রাম টি এস পি, ৫০ গ্রাম পটাশ দিয়ে গর্তে ও মাটির সঙ্গে ভালোভাবে মিশিয়ে ৭ দিন রেখে কাটিং লাগাতে হবে। গর্তে একটি খুঁটি কাত করে বড় গাছের সাথে বেঁধে দিলে ৩০-৪০ দিনের মাঝে তা গাছের কাণ্ডের সাহায্যে উপরে উঠে যাবে। এভাবে চুই গাছ বাড়তে থাকবে। বাউনি দেওয়াঃ চুইঝাল যেহেতু লতা জাতীয় তাই এর জন্য আরোহণের অন্য গাছের সাপোর্ট লাগে। আম, জাম, সুপারি, নারিকেল ও কাফলা গাছ বাউনি হিসেবে চুই চাষের জন্য ব্যবহৃত হয়। বাউনি না দিলেও মাটিতে বৃদ্ধি পায়। তবে এক্ষেত্রে বর্ষা মৌসুমে গাছের ক্ষতি হয়। কৃষকদের মতে আম ও কাফলা গাছে চাষকৃত চুই খুব সুস্বাদু হয়। ফসল সংগ্রহঃ চুই রোপণের ১ বছরের মাথায় খাওয়ার উপযোগী হয়। তবে ভাল ফলনের জন্য ৫/৬ বছরের গাছই উত্তম। ফলনঃ হেক্টর প্রতি প্রায় ২.০ থেকে ২.৫ মেঃ টন ফলন পাওয়া যায়। ৫/৬ বছরের একটি গাছ থেকে প্রায় ১৫ থেকে ২৫ কেজি পর্যন্ত ফলন পাওয়া যায়।